খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ পৌষ, ১৪৩১ | ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  বুধবারের মধ্যে দাবি পূরনের আশ্বাসে সচিবালয়ের সামনে থেকে সরে দাঁড়িয়েছে জবির শিক্ষার্থীরা, অব্যাহত থাকবে ক্যাম্পাস শাটডাউন
  প্রণয় ভার্মাকে ডাকার পরদিনই, দিল্লিতে বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনারকে তলব
  জুলাই-আগস্টে গণহত্যা : প্রসিকিউশনের হাতে শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের গুরুত্বপূর্ণ কল রেকর্ড

টিউলিপ ইস্যুতে চাপের মুখে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করতে নতুন করে চাপের মুখোমুখি হয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার। বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টিউলিপের পারিবারিক সম্পর্ক ও দুর্নীতির অভিযোগে সোমবার (১৩ জানুয়ারি) ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এই চাপ তৈরি হয়েছে।

আর্থিক দুর্নীতির এক মামলায় বাংলাদেশে টিউলিপ সিদ্দিক ও তার খালা শেখ হাসিনাসহ পরিবারের আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে তদন্ত শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাজ্যের এই মন্ত্রী ব্যাপক চাপে আছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এক সহযোগীর দেওয়া লন্ডনের ফ্ল্যাটে বসবাসের অভিযোগ ওঠার পর চলতি মাসের শুরুর দিকে টিউলিপ সিদ্দিক নিজের বিষয়ে কেয়ার স্টারমারের মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ড অ্যাডভাইজরকে তদন্তের আহ্বান জানান। অভিযোগের বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিক জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি কোনও ভুল করেননি।

যুক্তরাজ্যের সরকারে টিউলিপ সিদ্দিকের অবস্থান যৌক্তিক কি না জানতে চাওয়া হলে, সোমবার দেশটির জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী প্যাট ম্যাকফ্যাডেন স্কাই নিউজকে বলেন, তিনি (টিউলিপ) নিজের বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বানের মাধ্যমে সঠিক কাজ করেছেন। মন্ত্রী প্যাট ম্যাকফ্যাডেন জোর দিয়ে বলেন, এই ধরনের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করার ক্ষমতা রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড অ্যাডভাইজরের।

তিনি বলেন, ‘‘তিনি এটাই করছেন এবং এই সংকট মোকাবিলা করার সঠিক উপায় এটা।’’

কিন্তু যুক্তরাজ্যের বিরোধী রাজনীতিকরা ক্ষমতাসীন সরকার থেকে টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করতে চান। রোববার টাইমস রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কনজারভেটিভ পার্টির মুখপাত্র মেল স্ট্রাইড বলেছেন, ‘‘আমি মনে করি সরকারে তার ভূমিকা পালন করাটা অসমর্থনীয়।’’

‘‘এই মুহূর্তে তিনি যে পদে আছেন, টিউলিপের পক্ষে তা বেমানান। তিনি সরকারের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী।’’

বাংলাদেশে টিউলিপ ও তার পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অর্থায়নে পরিচালিত একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগের তদন্ত চলছে। গত ডিসেম্বরে দুর্নীতির এই অভিযোগের তদন্তে যুক্ত হয় টিউলিপ সিদ্দিকের নাম। এরপর তদন্তের অংশ হিসাবে তদন্তকারী কর্মকর্তারা দেশের বড় ব্যাংকগুলোকে সিদ্দিকের সাথে সম্পর্কিত অ্যাকাউন্টের লেনদেনের বিবরণ জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

৪২ বছর বয়সী টিউলিপ যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতের দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বে রয়েছেন। টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সদস্য, এমপি এবং প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্থ ও নগর বিষয়ক মন্ত্রী।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ- তিনি ২০১৩ সালে বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছিলেন, যেখানে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছিল।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক সানডে টাইমসের এক প্রতিবেদনে লন্ডনের কিং’স ক্রস এলাকায় অবস্থিত ২ শয্যাকক্ষের একটি ফ্ল্যাট ২০০৪ সালে টিউলিপ সিদ্দিককে আবদুল মোতালিফ নামের এক ডেভেলপার উপহার দিয়েছিলেন বলে জানানো হয়। মোতালিফ বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী এবং টিউলিপের খালা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত।

টাইমসের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ কোটি ৯৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা) দিয়ে ২০০১ সালের জানুয়ারিতে ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন আবদুল মোতালিফ। বেশ সস্তাতেই পেয়েছিলেন তিনি, কারণ একই বছর আগস্ট মাসে সেই ফ্ল্যাটটির পার্শ্ববর্তী আরেকটি ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯ কোটি ৭৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা)।

যুক্তরাজ্যের ইলেক্টোরাল রোল ডেটার তথ্য বলছে, ২০০৪ সালে উপহার হিসেবে পাওয়ার পর কিং’স ক্রসের সেই ফ্ল্যাটটিতে কয়েক বছর ছিলেন টিউলিপ। এরপর তার অন্য ভাই-বোনরা ছিলেন আরও বেশ কয়েক বছর। বর্তমানে ফ্ল্যাটটি ভাড়া দিয়েছেন টিউলিপ। সেখান থেকে বাৎসরিক ৯০ হাজার পাউন্ড (১ কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা) উপার্জন হচ্ছে তার।

নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ পর্যন্ত লেবার পার্টির পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাজ্য শাখার লবিং ইউনিট অ্যান্ড ইলেকশন স্ট্র্যাটেজি টিমে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তিনি। তার নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রেও এ সংশ্লিষ্টতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

তবে কোনও নির্বাচনী হলফনামায় ফ্ল্যাটটির বিষয়ে উল্লেখ করেননি টিউলিপ। হলফ নামায় তিনি যুক্তরাজ্যের হাইগেট এবং হ্যাম্পস্টেড এলাকার ফ্ল্যাটের ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন। ৭০ বছর বয়সী আবদুল মোতালিফ বর্তমানে পূর্ব লন্ডনে মুজিবুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে থাকেন। মুজিবুল ইসলাম আওয়ামী লীগের একজন সাবেক এমপির সন্তান।

এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। মুজিবুল ইসলাম স্বীকার করেন, তিনি ফ্ল্যাটটি ২০০১ সালে কিনেছিলেন। কিন্তু আর কোনও তথ্য জানাননি তিনি।

লন্ডনের ভূমি রেজিস্ট্রি রেকর্ডে দেখা যায়, ২০০৪ সালের নভেম্বরে তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটটির একক মালিক হন টিউলিপ সিদ্দিক। আর তখন তিনি কেবল লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছিলেন এবং তার কোনও উপার্জন ছিল না। ফ্ল্যাটটির কোনও মর্টগেজও ছিল না এবং এর কোনও দামও উল্লেখ ছিল না। এর ফলে ফ্ল্যাটটি যে কেনা হয়নি এবং তার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল, সেটির প্রমাণ মিলেছে। ফ্ল্যাট কেলেঙ্কারির এই ঘটনায় যুক্তরাজ্যে টিউলিপ সিদ্দিকের ওপর পদত্যাগের চাপ জোরাল হয়েছে।

সূত্র: এএফপি, সানডে টাইমস

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!